Sunday 1 October 2017


              প্রতিমা নিরঞ্জনের কারণে জল দূষণ

দেখতে দেখতে দুর্গাপুজো প্রায় এসেই গেল, হাতে আর মাত্র কয়েকটি দিন চারিদিকেই সাজ সাজ রব পারিবারিক পুজো ছাড়াও বারোয়ারি পুজোর ধূমই এখন বেশি  কর্মকর্তারা সকলেই ব্যস্ত তাঁদের নতুন নতুন  থিম নিয়ে, নানান জায়গায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের চিন্তায়  সকলেই মশগূল হয়ে আছেন কী ভাবে পার করবেন পুজোর দিনগুলি সকলে মিলে হইচই করে
          মা তো চলেই যাবেন সপরিবারে তাঁর নিজ গৃহে যাবার বেলার আড়ম্বরও এখন দেখার আলোর ঝলকানি, আতস বাজীর প্রদর্শনী, নানান বাদ্য, নৃত্য, উল্লাস, কী নয়  কিন্তু যাবার পরের অবস্থার কথা আমরা খুব কমই চিন্তা করি, অর্থাৎ প্রতিমা নিরঞ্জনের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এই দুশ্চিন্তা আজ শুধু বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সমস্যা সারা দেশ জুড়েই এখন এক ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে সারা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়েও সেই একই অবস্থা,  যেখানে তো এখন পুকুরের সংখ্যা খুবই কম তাই একমাত্র ভরসা  দামোদর ব্যারেজ হাজার হাজার প্রতিমা নিরঞ্জনের এই এক মাত্র জায়গা ফলে পুজোর পরে এই দামোদরের জলের অবস্থা হয়ে ওঠে বিষময় দুর্গাপুজোর পরই হয় লক্ষ্মী পুজো তারপর কালীপুজো, ছট্ এবং আরও নানান উৎসব তো লেগেই থাকে আর ততই বাড়তে থাকে প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য দূষণের মাত্রা মূর্তীর গায়ে সিসা যুক্ত রং এবং ক্যাডমিয়াম অন্ন্যান্য জৈব যৌগ নদীর জলকে ভীষণ ভাবে দূষিত করে তোলে সেই সঙ্গে মূর্তীর মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, ফুল, বেলপাতা, মালা, কলাগাছ, শোলার যাবতীয় অলঙ্কার নদীর জলকে দূষিত করার সাথে সাথে ভরাট করে তূলছে দামোদরের তলদেশ বিসর্জনের পর নদী বা পুকুরের জলে মিশে যাওয়া নানান বিষ মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে মানব দেহে প্রচণ্ড রকম ক্ষতি সাধন করে চলেছে গবাদি পশুরাও এই দূষণের শিকার দূষিত জল পান রে
      প্রতিমা নিরঞ্জনের কারণে জল দূষণ ঠেকাতে গ্রামাঞ্চল এখনও অনেক পিছিয়ে গ্রাম তথা শহরের আশেপাশের অঞ্চলের বহূ প্রতিমা এখন গ্রামাঞ্চলের পুকুরগুলিতেই বিসর্জন দেওয়া হয় তারপর কাঠামোগুলিতো ডাঁই করে পড়েই থাকে বেশ কয়েক দিন ধরে পুকুরগুলিতে তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষজন পূজোয় ব্যবহৃত যাবতীয় উপকরগুলি যেমন ফুল, বেলপাতা, কলাগাছ ইত্যাদী পুকুরের পাড়ে নির্দিষ্ট কোন জায়গায় ফেলা পাপ বা অপরাধ মনে রে পুকুরের জলে ফেলাই শ্রেয় বলে মনে করেন বরং স্নানের সময় সেই  উপচার মিশ্রিত জল কিছুটা গায়ে মাথায় ছিটিয়ে নেওয়াও যেন পূণ্যের ব্যাপার মনে করে পরিতৃপ্ত হন সেই কয়েকদিন অনেকে আবার নিয়মিত ভাবেই বাড়ির পূজা উপচারগুলি কাগজের ঠোঙা বা পলিথিন প্যাকেটে মুড়ে পুকুরের জলে ফেলে দিয়ে যান তাই গ্রামাঞ্চলের পুকুরগুলির দিকেও দুর্গাপুর পৌরসভার বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত
     অপরদিকে নানান কারণে দুর্গাপুর আসানসোল শিল্পাঞ্চলে দূষণের মাত্রা এমনিতেই বেশি মুনাফার লোভে বা বিদ্যুৎ খরচা কমাতে অধিকাংশ ছোট বড় কলকারখানাগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রক যণ্ত্র চালায়ই না ফলে কার্বন, সিলিকন, অ্যাসবেস্টাস, লোহা , ম্যাঙ্গানিজ এর আকরিক, কয়লার গুঁড়ো, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের  ছাই ইত্যাদী ক্ষতিকারক কণার হার বাতাসে বিপজ্জনক ভাবে বাড়ছে যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানান রোগ শিল্পাঞ্চলের মানুষের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)’এর জন্য ক্যান্সারের মত মারণ রোগেরও সংখ্যা বেড়েই চলেছে বাড়ছে কিডনি এবং যকৃতের রোগ
     95% কয়লা পাওয়া যায় এই শিল্পাঞ্চলের খনিগুলি থেকেই, সেখান থেকেও  সৃষ্টি হচ্ছে দূষণ এছাড়া বিভিন্ন কলকারখানাগুলি থেকে আসা বর্জ পদার্থ দামোদরে ফেলা হচ্ছে দিনের পর দিন এই দূষণের ফলে পার্টিকুলেট ম্যাটার নাইট্রোজেন অক্সাইডের মাত্রা ঝএই অঞ্চলে অনেকটাই বেশি দামোদরই এখানে এক মাত্র নদী যেখান থেকে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পানীয় জল সরবরৃহ করা হয় সারা দুর্গাপুর আসানসোল শিল্পাঞ্চলে
      এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট অনুরোধ তাঁরা যেন এই আসন্ন শারদীয়া উৎসবের প্রাক্কাল থেকেই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেন প্রতিমা নিরঞ্জনের দূষণ থেকে বাঁচার জন্য নিরঞ্জনের সময় নির্দিষ্ট করা ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মী নিয়োগ, সেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং কড়া নজর রাখা যেন প্রতিমা ছাড়া  পূজায় ব্যবহৃত আর কোন উপচারই নদী বক্ষে না ফেলা হয়  যদিও প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে এই শিল্পাঞ্চলে দূষণ রোধ করতে তবুও আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে নিয়ম অমান্য করলে  





No comments:

Post a Comment