Thursday 13 June 2019

Zaminders of Amrai, Durgapur, West Bengal.



দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর উপকন্ঠে অবস্থিত আমরাই গ্রামের জমিদার পরিবারের তিনশ বছরের ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে আঁকড়ে ধরে  বেঁচে থাকার  কথা ।


                   How did the new Zamindars survive and prosper.
                                                       


- Kanchan Kumar Chatterjee.

                                “……. a section of the Zamindars, notably Radhanath Chakraborty and Ashananda Saarkar of  Surul, Braja  Mohan Roy of Dwarka, Golaknath Chatterjee of Amrai and others not only maintained their existence but increased their proprietary interests in course of time. (Page 81 of The Economic Life of a Bengal District, Birbhum (1770-1857 by Dr. Ranjan Kumar Gupta, The University of Burdwan publication.”
          এই গোলকনাথ চট্টোপাধ্যায়েরই সুযোগ্য পুত্র হলেন স্বর্গীয় হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় যিনি ছিলেন বীরভূমের বিস্তীর্ণ এলাকার জমিদার ।সে সময় বীরভুমের রাজধানী ছিল রাজনগর বর্তমানে যার অবস্থান ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে । তদানীন্তন কালে রাজনগরের রাজা বা নবাব ছিলেন বদি-উজ-জমান খাঁ (১৭১৮-১৭৫২) । সে সময় রাজনগরের নবাবের অকর্মণ্যতা ও দুর্বলতার সুযোগে ইংরেজ শাসনের কবলে পড়ল বীরভুম । নবাবদের আর্থিক অবস্থা এতই শোচনীয় ও করুণ হয়ে দাঁড়াল যে লোকপুরের চৌধুরীদের কাছ থেকে তাঁদের টাকা ধার করতে হয় । এমনও জানা যায় যে এক সময় মুর্শিদাবাদের নবাব কে নজরানা, উপঢৌকন ও বার্ষিক খাজনা দিতে না পারায় বন্দি হতে হয়েছিল রাজনগরের নবাব কে । এই রকম যখন রাজনগর নবাব পরিবারের টালমাটাল অবস্থা সেই সময় গোলকনাথ চট্টোপাধ্যায় চলে এলেন রাজনগর যাঁর আদি বাড়ি ছিল যশপুর হেতমপুরের কাছে । তিনি ব্যবসা করতেন কাপড়ের । তিনি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ, প্রখর ব্যক্তিত্ব ও তীক্ষ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ । জনশ্রুতি আছে রাজনগরে নাকি এই গোলকনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামেই গোলক পট্টি বলে একটি জায়গা এখনও আছে । রাজনগরের নবাবের ক্রমাগত দুর্বলতার সু্যোগে সেখানে একের পর এক মহল কিনে তাঁর জমিদারি বিস্তৃত করেছিলেন সুদুর কুন্ডোহিত পরগনা (জামতাড়া জেলা) পর্যন্ত যা এখন ঝাড়খণ্ডের অর্ন্তভুক্ত । রাজনগরের নবাব কিন্তু গোলকনাথ বাবুর এই উন্নতি ভাল ভাবে নিলেন না । নবাবের পক্ষ থেকে সাবধান করে দেওয়া হল গোলকনাথ বাবুকে এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাজনগর ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হল ।  নবাবের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে গোলকনাথ বাবু চলে এলেন দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গী গ্রামে । কিছুদিন পরেই তিনি স্থায়ী ভাবে আমরাই গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করলেন । ইংরেজ সরকার ইতিমধ্যে পাঁচশালা/দশশালা বন্দোবস্ত করেও রাজস্ব নির্ধারণ নীতি ঠিক করে উঠতে পারেন নি ।সবশেষে অবশ্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নীতি চালু হল । লর্ড কর্ণওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার প্রবর্তন করলেন । এই সময় বীরভুমের যে সমস্ত বড় বড় জমিদারগ্ণের নাম জানা যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হেতমপুরের রাধানাথ চক্রবর্তী, আমরাইয়ের গোলকনাথ চট্টোপাধ্য্যায়, রাইপুরের জগমোহন সিংহ সুরুলের শ্রীনিবাস ও আশানন্দ সরকার প্রমূখ যাঁরা সমগ্র জেলার প্রতিস্ঠিত এবং প্রবল পরাক্রান্ত জমিদার হয়ে উঠলেন ।  এই নব্য জমিদার শ্রেণী নিজেদের আরও শক্তিশালী আরও অনেক বেশি সুরক্ষিত করার দিকে অধিকতর নজর দিতে থাকলেন । পরবর্তী পর্যায়ে জমিদার গোলকনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সুযোগ্য পুত্র হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বিপুল ভাবে জমিদারির বিস্তার ঘটালেন । 


তখন এই আমরাই বা পার্শ্ববর্তী  জায়গাগুলি ছিল ঘন গভীর জঙ্গলে ঢাকা ।সন্ধ্যে হলেই শোনা যেত শেয়াল বা হায়নার ডাক । যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এই অঞ্চলের অদুরে গ্রান্ড ট্রাংক রোডই ছিল একমাত্র ভরসা ।  আশে পাশে গ্রাম বলতে কাণ্ডেশ্বর, কুড়ুরিয়া, আমরাই, পিয়ালা, পলাশডিহা, বেনাচিতি, ভিড়িঙ্গী ইত্যাদী । কাণ্ডেশ্বর,  আমরাই ও কুড়ুরিয়ার জন্য ছিল একটিই মাত্র বাস স্ট্যান্ড ‘মোহনপুর ডাক বাংলো’ যা এখন ডিএসপি’র গর্ভে বিলীন । যানবাহন বলতে গরুর গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা নতুবা পায়ে হেঁটে । কাছাকাছি ছিল ওয়ারিয়া রেলওয়ে স্টেশন,  ডিএসপি’র মেন গেট বরাবর ছিল তার রাস্তা । বর্তমান স্টিল টাউনশিপের বিশেষত এ-জোনের অধিকাংশ এলাকাই দুর্গাপুর ইস্পাত প্রকল্প অথরিটি ষাটের দশকে অধিগ্রহন করে নেন তদানীন্তন মালিক পক্ষের কাছ থেকে যৎসামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে । এখনও এ-জোনের পশ্চিম সীমান্তবর্তী এলাকায় তাঁর জমিদারির বহু জমি ডিএসপি অধিগ্রহন করার পর ফেলে রেখে দেয় ‘গ্রিন বেল্ট’ হিসাবে ।
    হঁরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এই অঞ্চলে শুধু তাঁর জমিদারিই বিস্তার করেন নি, তিনি বীরভুমের এক বিশাল অংশ জুড়েও তাঁর জমিদারি বিস্তার করেছিলেন ।একের পর এক লাট কিনেছিলেন তিনি তখন ।  এখনও খয়রাশোল মৌজায় কেন্দ্রগড়িয়া গ্রামে এবং তার পার্শ্বর্বতী লোকপুরে গ্রামেও তাঁর প্রচুর জমি-জায়গা, কাছারি বাড়ি, কালী মন্দির এবং বেশ কয়েকটি পুকুর বর্তমান ।যদিও ১৯৭৮ সালের বণ্যার পর চাষাবাদ আর বড় একটা হয় না সেখানে । আগে আমরাও দেখেছি বেশ কয়েক জোড়া গরুর গাড়ি করে সেসময়  বাবুদের জন্য ফল, সব্জি, আখের গুড়, ইত্যাদী আসত । এখন আর সে সব কিছুই আসে না । যশপুরে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে সমাধি মন্দিরটি এখনও সেখানে বিদ্যমান ।
এই আমরাই অঞ্চলেও একাধারে তিনি স্থাপন করেছিলেন বিশালাকার  দুর্গামন্দির, বিষ্ণুমন্দির, পরপর তিনটি শিব মন্দির, জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য এই গ্রামাঞ্চলে বহু পুষ্করণী । নানান জনহিতকর কাজের মধ্যে তিনি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন । তাঁর দুরদর্শিতা, তাঁর জীবন যাপন এবং জনদরদী ও সমাজ় হিতৈষী মনোভাবের জন্য এতদ্অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে তাঁর নাম আজও ধ্বণিত হয় । তাঁর বিশাল পরিবারের প্রতিটি মানুষ আজও তাঁকে মন প্রাণ উজাড় করে শ্রদ্ধা ভক্তি করেন । তারঁ যোগ্যতা, তাঁর মধুর, সৌহার্দ্যপুর্ণ ও পরহিতপরায়ণ ব্যবহারের জন্য বৃটিশ সরকার তাঁকে ‘বাবু’ উপাধিতে ভূষিত করেন । তাঁর প্রজারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে ‘রাজা বাবু’ বলে সম্বোধন করতেন । তিনি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে বর্ধমান মহারাজাও তাঁকে আমণ্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁর দরবারে পঞ্চম জর্জের  আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকারের সময় । এটা ছিল তাঁর কাছে এক গর্বের বিষয় । সে সময় সেই অনুষ্ঠানে বহু তাবড় তাবড় জমিদাররাও তখন আমণ্ত্রণ পান নি সেখানে প্রবেশ করার । রাজা মহারাজার মত বিষয় সম্পত্তি ছিল তাঁর । রাজা-মহারাজা, রায়-বাহাদুর খেতাব না পেলেও তিনি সত্যিই একজন স্বনামধন্য পুরুষ ছিলেন । তৎকালীন কলকাতার  বহু ধনী জমিদারদের সঙ্গে ছিল তাঁর সুসম্পর্ক । শুধু তাই নয়, তদানীন্তনকালে যখন উইলিয়াম ফেরী ডিসট্রিক্ট কালেক্টর ছিলেন সেই সময় এই হরিপ্রসাদ বাবুকেই ফেরী কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন।  তিনিই বীরভুমের রাজস্ব আদায় করতেন ফেরী সাহেবের নামে । জেলার অন্যান্য বড় বড় জমিদারদের এমনকী বড় বড় খেতাবধারী জমিদারদের মধ্যে তাঁকেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছিল এটাও কম  সৌভাগ্যের কথা নয় ।
    এই সময় তাঁর হাত ধরেই স্থাপিত হয়েছিল  এই আমরাই গ্রামে বাবু পাড়ায় বিশাল দুর্গামন্দিরটি, যা কোন এক সময় এই অঞ্চলের গর্ব ছিল বা ছিল এক দর্শনীয় স্থান । মন্দির গাত্রের দুর্লভ কারুকার্য, চিত্রকলা এবং ধনুকাকৃ্তি খিলান (Arch Type)  তদানীন্তন কালে সকলকেই আকৃষ্ট করে তুলত । একই সঙ্গে স্থাপিত হয় বিষ্ণুমন্দিরটিও এবং নিকটেই পর পর তিনটি শিবমন্দির । এগুলি সবই এখনও দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাস ঐতিহ্যের শত শত বছরের সাক্ষী হয়ে । বিষ্ণুমন্দিরের চুড়ায় সেই সময়ের গরূঢ়ের মূর্তিটি আজও শোভা পায় ।


     তিনি শুধু মাত্র মন্দির নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হননি, এই পরিবারের মঙ্গল কামনায় প্রবর্তন করেছিলেন দুর্গাপুজা, বাবা লক্ষ্মীজনার্দনের নিত্য পুজা ও ভোগ নিবেদনের নিয়ম, নিত্য শিবলিঙ্গগুলির পুজাপাট, মনসা পুজা, দোল উৎসব, রথযাত্রা, উত্থান একাদশী, জন্মাষ্টমী এবং নানান ব্রত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্তর্নিহিত উদ্দেশে তিনি ঠাকুরের উদ্দেশে চিহ্নিত করেছিলেন প্রচুর জমি জায়গা, দেবত্তর সম্পত্তি হিসাবে ।  এমন  কি সেকালে ঠাকুরের সমস্ত রকম পুজা আর্চা বা নানান ভাবে সহায়তা করার জন্য সেই সব লোকেদের জমিও প্রদান করেছিলেন যাতে ঠাকুরের সেবার কোনদিন কোনরূপ বিঘ্ন না ঘটে । আজও দেবত্তর সম্পত্তির আয় থেকেই সমস্ত রকম পুজা-আর্চার খরচ চালানো হয় এখানে । 

আমরাইয়ে তাঁর পরিবারে কালী পুজা না থাকলেও তাঁর নিজস্ব  মহল কেন্দ্রগড়িয়ায় (খয়রাশোল সন্নিকটে) তিনি প্রতিস্ঠা করেছিলেন বামাকালীর পুজো । হাজার বিলাসব্যসনের মধ্যেও সেখানে ‘হরিমঞ্চ’ তৈ্রি করে গেছেন তিনি । তারাপীঠে জমিদান করে গেছেন জমিদার হরিপ্রসাদ বাবু । কাশীতে শিবলিঙ্গ প্রতিস্ঠা করেছেন এবং এখনও সেখানে যথারীতি সেই শিবলিঙ্গ পুজিত হয় ।সেখানেও তিনি শিবোত্তর সম্পত্তি দান করে গেছেন । তারাপীঠেও তিনি জমি দান করে গেছেন । 
    এ পরিবারের সদস্য বা সেবাইতরা যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছেন দুর্গাপুজা সাড়ম্বরে । এই বাবু পরিবারের পুজোর প্রধান আকর্ষণ হল সপ্তশতী হোম মহাষ্টমীর দিন । অর্থাৎ চণ্ডীর সাতশ শ্লোকই ঐদিন পাঠ করা হয় । যজ্ঞসমূহের মধ্যে যেমন অশ্বমেধযজ্ঞ শ্রেষ্ঠ, সেইরূপ স্তোত্রসমূহের মধ্যে সপ্তশতী চণ্ডীই শ্রেষ্ঠ (স্তবানামপি সর্বেষাং তথা সপ্তশতীস্তবঃ)দুর্গাপুজার সময় আগে বলিদান হত কিন্তু পরে স্বপ্নাদেশ হওয়ায় বলিদান প্রথা উঠে যায় এবং তার পরিবর্তেই শুরু হয় এই সপ্তশতী হোম । আগে দূর দূর থেকে পণ্ডিতরা আসতেন এই চণ্ডী পাঠের জন্য । দেশদেশান্তর থেকে অনেক বড় বড় ধনী জমিদাররা আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে আমরাই’এ তাঁর বাড়িতে আসতেন । পুজোর সময় চারদিন ধরে চলত নানা অনুস্ঠান, পঞ্চ গ্রামের ভোজ, সর্বধর্ম সমন্বয়ের বৈঠক বসত তাঁর চণ্ডীমন্ডপে এবং আজও সেই  বিশাল চণ্ডীমন্ডপ কালের সাক্ষী হয়ে দণ্ডায়মান । এখনও যে মূল বইটি থেকে চণ্ডী পাঠ করা হয় সেটি প্রায় তিনশ বছর আগের, তালপাতার পুঁথি। তবে এখন স্থানীয় অভিজ্ঞ পুরোহিত দ্বারাই এই গুরুত্বপুর্ণ কাজটি সুসম্পন্ন করা হ্য় । প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে আজও  এক ব্যতিক্রম দেখা যায় এখানে লক্ষী-গণেশ সরস্বতী-কার্তিকের অবস্থানে সচরাচর দেখা যায় মা দুর্গার বাম পার্শ্বে সরস্বতী-কার্তিক কিন্তু এখানে মা দুর্গার বাম পার্শ্বে থাকে লক্ষী-গণেশ এবং ডান দিকে থাকেন সরস্বতী-কার্তিক।প্রতিমা এখনও মন্দিরের ভিতরেই গড়া হয় ।

    দোল উৎসব এ পরিবারের এক বিশেষ আকর্ষণ । আগের দিন পালিত হয় চাঁচর বা ন্যাড়া পোড়ার অনুষ্ঠান । নতুন পুকুর সংলগ্ন এক জায়গায় তৈ্রী করা হয় একটি কুঁড়ে ঘর । মন্দির থেকে দোলায় করে নিয়ে যাওয়া হয় লক্ষ্মীজনার্দনের বিগ্রহ । সেখানে পুজা-আর্চা ও হোম যজ্ঞের পর পোড়ান হয় সেই কুঁড়ে ঘর  । হঁরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এই গ্রামের আরও অন্যান্য পরিবারের সঙ্গে  সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রচলন করেছিলেন নানান দিনে তাঁদের কুলদেবতাদের এখানে আনার বা সেখানে যাবার । আজও এই পরিবারের সদস্যরা   তাই দোলের দিন ধুমধাম করে রায় পরিবার থেকে তাদের কুলদেবতা শ্রী শ্রী গোপাল এবং ভট্টার্চায্য পরিবারের কুলদেবতা  শ্রী শ্রী দামোদর’এর বিগ্রহ গুলি কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে নিয়ে আসেন এই দুর্গামন্দিরে দোল উৎসব পালনের জন্য । আবির গুলালে স্নাত করে সন্ধ্যেয় আরতি সম্পন্ন হওয়ার পর আবার সেইরুপ শোভযাত্রা সহকারে    কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে সসস্মানে স্বস্থানে পৌঁছে দিয়ে আসা হয় তাঁদের কুলদেবতাদের । অনুরুপ ভাবে এ পরিবারের কুলদেবতা লক্ষ্মীজনার্দন’কেও রায় পরিবার থেকে সসস্মানে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের রাশ উৎসবে যোগদানের জন্য, পূর্ণিমার ভরা চাঁদের রাতে । দোলের দিন হোম যজ্ঞ ইত্যাদী নানান অনুষ্ঠান আজও জাঁকজমক সহকারে পালন করে আসছেন এ পরিবারের সদস্যরা ।হোম যজ্ঞ সমাপনের পর শুরু হয় যৎসামান্য ব্রাহ্মণ ভোজন ।সেই রীতি আজ ও চলে আসছে ।

ঠাকুরের ভোগ রান্নার জন্য রয়েছে ভোগ মন্দির । পুজোর কয়দিন এবং দোলের দিন এখানেই ভোগ রান্না এবং প্রসাদ বিতরন করা হয় । বাবা লক্ষ্মীজনার্দনের নিত্য সেবার ভোগ আগে এখানেই করা হত কিন্তু এখন আর তা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না । তাই সেবাইতরা নিজ নিজ পালানুযায়ী নিজেদের বাড়িতেই ভোগ রান্না করে মন্দিরে ঠাকুরের উদ্দেশে নিবেদন করেন ।
কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে এখানে পালন করা হয় উত্থান একাদশী । এই একাদশীটি প্রবোধিনী একাদশী নামেও খ্যাত । বেশ কয়েক গাছা আখের ওপর বাবা লক্ষ্মীজনার্দনের বিগ্রহ স্থাপন করার পর পুজা ও ভোগ নিবেদন করা হয় । সেদিন ঠাকুরের উদ্দেশে নতুন লেপ, বালিশ তৈরি করে উৎসর্গ করা হয় আসন্ন শীত ঋততে ঠাণ্ডা উপভোগের জন্য । এ ছাড়াও গ্রীষ্মকালে সারা বৈশাখ মাস ধরেই চলে ধারার  অনুস্ঠান ।

    জমিদারি আমল আজ আর নেই । নেই সেই যৌথ পরিবার যা আজ ভেঙ্গে ভেঙ্গে অনু পরিবারে এসে ঠেকেছে । তবুও এই জমিদার পরিবারের প্রতিটি সদস্য বা সেবাইত হঁরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের এই ঐতিহ্যকে আজও অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টায় অনঢ় । প্রতিটি মন্দির সংস্কারের দায়িত্ব তাঁরা নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন । পুজা আর্চা আচার অনুষ্ঠান মন্দির রক্ষনাবেক্ষণ সব কিছুতেই তাঁরা অবিচল থেকে তাঁদের ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে আঁকড়ে থাকতে চেষ্টা করে চলেছেন ।

তথ্যসুত্র ;
১) দুর্গাপুরের ইতিহাস,সভ্যতা ও সংস্কৃতি – ডঃ সুশীল ভট্টাচার্য ।
২) দি ইকনমিক লাইফ অফ এ বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট, বীরভুম
   (১৭৭০-১৮৫৭)– ডঃ  রঞ্জন কুমার গুপ্ত।
৩) বন্ধুবরেষু – অতীন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায় .


   

No comments:

Post a Comment