Saturday, 29 March 2025

 MY LIFE AFTER RETIREMENT



আজ সকালে গিয়েছিলাম আমাদের গ্রামেই এক তেল মিলে সরষের তেল আনতে । সকাল বেলা - বেশ ফাঁকাই ছিল মিল, তাছাড়া মিল মালিক আমার বেশ পরিচিত। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সরষে পিষিয়ে

Kanchan Kumar Chatterjee <chatterjee.kanchan@gmail.com>

12:11 PM (22 minutes ago)

to Kanchan

আজ সকালে গিয়েছিলাম আমাদের গ্রামেই এক তেল মিলে সরষের তেল আনতে । সকাল বেলা - বেশ ফাঁকাই ছিল মিল, তাছাড়া মিল মালিক আমার বেশ পরিচিত। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সরষে পিষিয়ে
কেমন সুন্দর ভাবে তেল বেরিয়ে আসছে ।
মনে মনে কত কি ভাবলাম । অবসর জীবন, গ্রামে থাকি তাই এখনো মিল থেকে এনে খাঁটি সরষের তেল খেতে পাচ্ছি । এখনো নিজস্ব পুকুর থেকে ধরা জ্যান্ত মাছ যাকে বলে jumping fish খেতে পারছি প্রায়শই, অনতি দুরেই এই অঘ্রহায়ন পৌষের সোনালী রোদে দাঁড়িয়ে খেজুর গাছের জিরেন কাঠির রস খেতে পারছি । চোখের সামনে তৈরী হচ্ছে নলেন গুড় বা পাটালি - ইচ্ছে থাকলেই নানান ভাবে সেই অমৃত সমান নলেন গুড় দিয়ে নানান পদের প্রাতরাশ খেতে পারছি । ভালই কাটছে অবসর জীবন এই গ্রামে; মাঝে মাঝে যেন বলতে ইচ্ছে করে এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না ।
যদিও আমাদের গ্রামে সেই অনগ্রসর গ্রাম্য জীবন এখন আর নেই। ইস্পাতনগরীর উপকণ্ঠে অবস্থিত; তাই শহরের সব সুখ সাচ্ছন্দই পাওয়া যায় এই গ্রামীন শান্ত সুশীতল পরিবেশের সাথে সাথে । খুব বড় আমাদের এই গ্রাম । অনতিদুরেই গড়ে উঠেছে নানান নামে নানান বসতি সুসজ্জিত ভাবে । তাই বহূ মানুষের বসবাস এখন এই গ্রামে । হিন্দু মুসলমান প্রায় সমান সমান । পারস্পরিক সম্পর্ক সুমধুর - যেন একই বৃন্তে দুটি কুসুম ।
ভোর হতে না হতেই চলে আসে কর্পোরেশনের জল, সকাল হলেই চলে আসে নির্মল মিশনের মানুষজন তাদের গাড়ি নিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে বাজিয়ে দরজায় দরজায় ডাক দেয় । সমস্ত রাস্তা ঘাট একেবারে যেন বাঁধানো - concreted সন্ধ্যে হলেই প্রতিটি রাস্তায় জ্বলে ওঠে LED লাইট, কোথাও বা আবার সোলার লাইটে ঝলমল করছে গোটা এলাকা । মাটির বাড়ি বলতে প্রায় নেই-ই । প্রাসাদোপম সুসজ্জিত অট্টালিকা, বহু বাড়িতেই বাতানুকুল যন্ত্র । এছাড়া আধুনিক সুসভ্য জীবনের সব কিছুই এখন বাড়িতে বাড়িতে শোভা বৃদ্ধি করে । গরুর গাড়ি তো কবেই উঠে গেছে । স্থান দখল করে নিয়েছে অগুনতি ট্রাক্টর। প্রায় সব বাড়িতেই দেখা যায় একাধিক দ্বিচক্র যান । চার চাকা বা ছয় চাকার গাড়িও কিছু কম নেই । অনতি দুরেই বিমান বন্দর । মাথার উপর উড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রুটের বিমান ঘন্টায় ঘন্টায় । ছোট ছোট শিশুদের বিভিন্ন স্কুলে নিয়ে যাবার জন্য আসে নানান গাড়ি । পুঁথি বগলে পাঠশালে যাবার ছেলে মেয়েদের সংখ্যা এখন খুবই কম । সবাই প্রায় টাই বেঁধে গলায় আই কার্ড ঝুলিয়ে স্কুলে যাচ্ছে । যদিও গ্রামে একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল আছে তবুও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়া এক অন্য মাত্রা এনে দেয় আধুনিক জীবন যাপনে ।
আগে যখন চাকরি করতাম তখন গ্রামে থাকার জন্য মাঝে মাঝে আফসোস হত । অনেকেই দেখতাম শহূরে জীবনের সুখসুবিধার জন্য গ্রাম ছেড়ে কোয়াটার্সে চলে যাচ্ছে তখন সত্যিই মনে হত হয়ত ভুল করলাম । এখন কিন্তু আর সেভাবে মনকে পীড়া দেয় না । এখন মনে হয় এখানেই যেন প্রাণের আরাম - মনের আনন্দ - আত্মার শান্তি । এখনো এখানে প্রতি সন্ধ্যায় প্রতি বাড়ি থেকেই শোনা যায় শঙ্খধ্বণি , কান পাতলে এখনো বহূ বাড়ি থেকে ভেসে আসে প্রতি বৃহস্পতি বারে লক্ষীর পাঁচালীর সুর বা পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পুজোর মন্ত্র । প্রতি সন্ধ্যায় শোনা যায় বিভিন্ন মন্দির থেকে সন্ধ্যরতির কাঁসার ঘন্টার আওয়াজ । এখনো কার্তিকের নিশি ভোরে খোল করতাল নিয়ে বের হয় হরিনাম সংকীর্তনের দল । বৈশাখের তপ্ত দিনের শেষে সন্ধ্যায় দখিনা বাতাস বওয়ার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়ে নানান ভক্ত বৃন্দ হরিনাম সংকীর্তন করতে । এছাড়া নানান পুজো আর্চা মেলা তো লেগেই আছে । তাই জীবন সায়াহ্নে মনে হয় এই গ্রামই যেন আমার স্বর্গপূরী - বিশ্ব শোভা এইখানেতেই গেছে চুরি

 

No comments:

Post a Comment