MY LIFE AFTER RETIREMENT
আজ সকালে গিয়েছিলাম আমাদের গ্রামেই এক তেল মিলে সরষের তেল
আনতে । সকাল বেলা - বেশ ফাঁকাই ছিল মিল, তাছাড়া মিল মালিক আমার বেশ পরিচিত। দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সরষে পিষিয়ে
|
12:11 PM (22 minutes ago) |
|
||
|
আজ সকালে গিয়েছিলাম আমাদের গ্রামেই এক তেল মিলে সরষের তেল
আনতে । সকাল বেলা - বেশ ফাঁকাই ছিল মিল, তাছাড়া মিল মালিক আমার বেশ পরিচিত। দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সরষে পিষিয়ে
কেমন সুন্দর ভাবে তেল বেরিয়ে আসছে ।
মনে মনে কত কি ভাবলাম । অবসর জীবন, গ্রামে থাকি তাই এখনো মিল থেকে এনে খাঁটি সরষের
তেল খেতে পাচ্ছি । এখনো নিজস্ব পুকুর থেকে ধরা জ্যান্ত মাছ যাকে বলে jumping
fish খেতে পারছি প্রায়শই, অনতি দুরেই এই অঘ্রহায়ন পৌষের সোনালী রোদে দাঁড়িয়ে খেজুর
গাছের জিরেন কাঠির রস খেতে পারছি । চোখের সামনে তৈরী হচ্ছে নলেন গুড় বা পাটালি -
ইচ্ছে থাকলেই নানান ভাবে সেই অমৃত সমান নলেন গুড় দিয়ে নানান পদের প্রাতরাশ খেতে
পারছি । ভালই কাটছে অবসর জীবন এই গ্রামে; মাঝে মাঝে যেন বলতে ইচ্ছে করে এমনি করেই যায় যদি
দিন যাক না ।
যদিও আমাদের গ্রামে সেই অনগ্রসর গ্রাম্য জীবন এখন আর নেই। ইস্পাতনগরীর উপকণ্ঠে
অবস্থিত; তাই শহরের সব সুখ সাচ্ছন্দই পাওয়া যায় এই গ্রামীন শান্ত
সুশীতল পরিবেশের সাথে সাথে । খুব বড় আমাদের এই গ্রাম । অনতিদুরেই গড়ে উঠেছে
নানান নামে নানান বসতি সুসজ্জিত ভাবে । তাই বহূ মানুষের বসবাস এখন এই গ্রামে ।
হিন্দু মুসলমান প্রায় সমান সমান । পারস্পরিক সম্পর্ক সুমধুর - যেন একই বৃন্তে দুটি
কুসুম ।
ভোর হতে না হতেই চলে আসে কর্পোরেশনের জল, সকাল হলেই চলে
আসে নির্মল মিশনের মানুষজন তাদের গাড়ি নিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে
বাজিয়ে দরজায় দরজায় ডাক দেয় । সমস্ত রাস্তা ঘাট একেবারে যেন বাঁধানো - concreted
। সন্ধ্যে হলেই প্রতিটি রাস্তায় জ্বলে ওঠে LED লাইট, কোথাও বা আবার
সোলার লাইটে ঝলমল করছে গোটা এলাকা । মাটির বাড়ি বলতে প্রায় নেই-ই । প্রাসাদোপম
সুসজ্জিত অট্টালিকা, বহু বাড়িতেই বাতানুকুল যন্ত্র । এছাড়া আধুনিক সুসভ্য
জীবনের সব কিছুই এখন বাড়িতে বাড়িতে শোভা বৃদ্ধি করে । গরুর গাড়ি তো কবেই উঠে
গেছে । স্থান দখল করে নিয়েছে অগুনতি ট্রাক্টর। প্রায় সব বাড়িতেই দেখা যায় একাধিক
দ্বিচক্র যান । চার চাকা বা ছয় চাকার গাড়িও কিছু কম নেই । অনতি দুরেই বিমান বন্দর
। মাথার উপর উড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রুটের বিমান ঘন্টায় ঘন্টায় । ছোট ছোট শিশুদের
বিভিন্ন স্কুলে নিয়ে যাবার জন্য আসে নানান গাড়ি । পুঁথি বগলে পাঠশালে যাবার ছেলে
মেয়েদের সংখ্যা এখন খুবই কম । সবাই প্রায় টাই বেঁধে গলায় আই কার্ড ঝুলিয়ে স্কুলে
যাচ্ছে । যদিও গ্রামে একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল আছে তবুও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়া
এক অন্য মাত্রা এনে দেয় আধুনিক জীবন যাপনে ।
আগে যখন চাকরি করতাম তখন গ্রামে থাকার জন্য মাঝে মাঝে আফসোস হত । অনেকেই দেখতাম
শহূরে জীবনের সুখসুবিধার জন্য গ্রাম ছেড়ে কোয়াটার্সে চলে যাচ্ছে তখন সত্যিই মনে
হত হয়ত ভুল করলাম । এখন কিন্তু আর সেভাবে মনকে পীড়া দেয় না । এখন মনে হয় এখানেই
যেন প্রাণের আরাম - মনের আনন্দ - আত্মার শান্তি । এখনো এখানে প্রতি সন্ধ্যায় প্রতি
বাড়ি থেকেই শোনা যায় শঙ্খধ্বণি , কান পাতলে এখনো বহূ বাড়ি থেকে ভেসে আসে প্রতি বৃহস্পতি
বারে লক্ষীর পাঁচালীর সুর বা পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পুজোর মন্ত্র । প্রতি সন্ধ্যায়
শোনা যায় বিভিন্ন মন্দির থেকে সন্ধ্যরতির কাঁসার ঘন্টার আওয়াজ । এখনো কার্তিকের
নিশি ভোরে খোল করতাল নিয়ে বের হয় হরিনাম সংকীর্তনের দল । বৈশাখের তপ্ত দিনের শেষে
সন্ধ্যায় দখিনা বাতাস বওয়ার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়ে নানান ভক্ত বৃন্দ হরিনাম
সংকীর্তন করতে । এছাড়া নানান পুজো আর্চা মেলা তো লেগেই আছে । তাই জীবন সায়াহ্নে
মনে হয় এই গ্রামই যেন আমার স্বর্গপূরী - বিশ্ব শোভা এইখানেতেই গেছে চুরি ।
No comments:
Post a Comment